স্তন ক্যান্সারের কি ও কেন হয়
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রতিবছরই বাড়ছে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়ছে স্তন ক্যান্সারের হারও।
চিকিৎসকরা বলেন, যখন কিছু স্তনের কোষ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় তখন সেই অনিয়মিত ও অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজিত হয়ে টিউমার বা পিণ্ডে পরিণত হয়।
স্তন ক্যান্সারের |
এটি রক্তনালীর লিম্ফ (কোষের রস) এবং অন্যান্য মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই প্রবণতা ছড়ায় ক্যান্সার।
রোগীরা কি ধরনের উপসর্গ নিয়ে আসে?
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর দেড় লাখের বেশি মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।
স্তন ক্যান্সার বাংলাদেশের মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সার। সামাজিক রক্ষণশীলতার কারণে বাংলাদেশের নারীরা প্রকাশ্যে স্তন শব্দটিও উচ্চারণ করতে চান না, তবে প্রাথমিক লক্ষণগুলো তারা শরীরে ধরে রাখেন, যে কারণে বেশিরভাগ রোগীই শেষ পর্যায়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডাঃ নাজনীন নাহার বলেন, শুধু নারী নয় পুরুষরাও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি।
• বেশিরভাগ সময় তারা স্তনে চাকা দিয়ে আসে। অনেক লোক স্তনের বোঁটায় ঘা বা ঘা বা স্তনের চারপাশে চুলকানিযুক্ত কালো জায়গায় উপস্থিত থাকে।
• স্তনের বোঁটা থেকে দুধের সাদা রস নিঃসৃত হয়। খুব কমই ব্যথা বা লালচে স্তনের মতো উপসর্গ নিয়ে আসে।
কেন স্তন ক্যান্সার হয়?
অধ্যাপক নাজনীন নাহার বলেন, বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, তবে কিছুটা সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে এখন মানুষ আগের চেয়ে বেশি চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছে এবং সে কারণেই আমরা আগের চেয়ে বেশি জানি।
তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে স্তন ক্যান্সার হতে পারে।
আমাদের জীবনযাত্রায় এবং খাদ্যাভাসে অনেক পরিবর্তন এসেছে, সেটা একটা কারণ। এছাড়া কারো পরিবারে স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকতে পারে। যদি কেউ 12 বছর বয়সের আগে ঋতুস্রাব হয় এবং দেরীতে মেনোপজ বা মেনোপজ হয়, তবে তারাও ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়াও, বিকিরণ স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।"
অধ্যাপক নাজনীন নাহার বলেন, দেরিতে সন্তান ধারণ করা, যাদের সন্তান নেই, বা যারা বুকের দুধ পান করেন না, তাদের খাবারে যদি সবজি বা ফলমূলের চেয়ে চর্বি ও প্রাণিজ আমিষ বেশি থাকে এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খান এবং যাদের ওজন বেশি তাদেরও ঝুঁকি থাকে। স্তন ক্যান্সার।
এছাড়াও যারা দীর্ঘদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাচ্ছেন বা হরমোন ইনজেকশন নিচ্ছেন তারাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
এছাড়াও, বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। বিশেষ করে ৫০ বছর বয়সের পর এই ঝুঁকি বাড়ে। তখন আর কিছু করার থাকে না।
তিনি বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে স্তন ক্যান্সার ১০০% নিরাময়যোগ্য।
কখন একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন?
স্তনে পিণ্ড বা পিণ্ড দেখা দিলে
• স্তনবৃন্তের কোনো পরিবর্তন, যেমন ইন্ডেন্টেশন, অসমতা বা বক্রতা
• স্তনের বোঁটা থেকে অস্বাভাবিক স্রাব
• স্তনের ত্বকের রঙ বা চেহারা পরিবর্তন
• যদি বগলে পিণ্ড বা পিণ্ড দেখা যায়
একটি ম্যামোগ্রাম হল একটি বিশেষ ধরনের এক্স-রে মেশিন যা স্তনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন শনাক্ত করে।
তবে অধ্যাপক নাজনীন নাহার বলেন, ৩০ বা ৩৫ বছর বয়সের পর সব নারীরই নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করা উচিত। এর জন্য মূলত তিনটি পদ্ধতি রয়েছে।
• একটি ম্যামোগ্রাম, বা বিশেষ ধরনের এক্স-রে, যা স্তনে অস্বাভাবিক পরিবর্তন শনাক্ত করে।
• ডাক্তারের দ্বারা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে পিণ্ড বা পিণ্ডের জন্য পরীক্ষা করুন।
• নিয়মিত স্তন স্ব-পরীক্ষা।
বাংলাদেশে স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা?
বিশেষায়িত ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে চারটি হাসপাতাল রয়েছে।
বাংলাদেশ ক্যান্সার ইনস্টিটিউটসহ সরকারি-বেসরকারি অনেক হাসপাতাল স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা করছে।