একটা কালো ছেলের জীবন



কালো ছেলের গল্প
 কালো ছেলের গল্প 

দুইদিন টিউশনি করার পর। তৃতীয় দিন ছাত্রী মা ডেকে আমার হাতে একটা কাম ধরিয়ে দেয়। বলল দুইদিন পড়িয়েছো এর জন্য। আমি তোমাকে পুরো মাসের বেতন দিয়ে দিয়েছি কালকে থেকে তোমাকে আর আসতে হবে না। আমি তখন একটু ভয় পেয়ে গেলাম।

মনে মনে ভাবলাম দুই দিনের মধ্যে এমন কি করলাম যার কারণে পুরো মাসের বেতন দিয়ে বের করে দিল। তখন আমি আন্টিকে বললাম আন্টি কিছু মনে না করলে।

আমি জানতে পারি কি দোষ


আমার কি এমন করলাম। আমি যার কারণে দুই দিনের মধ্যে পুরো মাসের বেতন দিয়ে আমাকে বের করে দেয়া হলো। আন্টি তখন বলল। আমার তো দোষ নেই। এমনি এমনি কালকে থেকে তোমাকে আর আসতে হবে না তখন আমি আন্টিকে বললাম।

প্লিজ আমাকে একটা মাস সুযোগ দিন একটা মাস দেখুন। আমি কিভাবে পড়াই। তারপরে না হয় আমাকে বের করে দিবেন। তখন আমার কোনো আপত্তি থাকবে না।

তখন ছাত্রী মা বলল আমার মেয়ে তোমার কাছে পড়তে চায় না। তোমাকে দেখলেই নাকি তার ভয় লাগে। তখন আমি কামটা। আন্টি হাতে দিয়ে বললাম। দুই দিনের জন্য আমাকে টাকা দিতে হবে না দুইদিন আমি আপনার মেয়ে কে এমনি পড়িয়েছি টিউশনি করতে গেলে যে চেহারা লাগে। স্মার্ট লাগে। এটা আমি জানতাম না। এটা জানলে আমি কখনোই আপনার মেয়েকে পড়াতে আসতাম না। বলে আমি সেখান থেকে বের হয়ে গেলাম রাস্তায় যেতে যেতে ভাবলাম।

কলেজ লাইফের কথা কলেজের অনুষ্ঠানে স্যার উপস্থাপন খুঁজছিলেন। আমি তখন হাত তুলে বলেছিলাম স্যার স্কুল লাইফে। আমি অনেক উপস্থাপন করেছি অনেক ভালো উপস্থাপন করতে পারি। আমি আজকে উপস্থাপন করতে চাই।

স্যার আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো তোর মত কালা কাউয়া উপস্থাপন করে। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে শেষ হয়ে যাবে। স্যারের মুখে একটা কথা শুনে আমার নাম আবুল বাসাত থেকে হয়ে গেল কাউয়া বাসাত।

পরবর্তীতে কেউ আমাকে চিনত না। আমাকে কলেজে চিনতো কাউয়া বাসাত নামে বহুদিন আগে বাজিতপুরে থেকে ঢাকা যাচ্ছিলাম আমার পাশে বসে ছিল।

এক সুন্দরী মেয়ে


আমি যখন এসেছিলে বসতে লাগলাম। মেয়েটি তার ওড়না দিয়ে নাক চাপিয়ে ধরল। বাস যাওয়ার পরে কন্টাক্ট ডাক দিয়ে বলল। ভাই আমার এই সেট চেঞ্জ করে দেন। তখন কন্টাক্ট আমার দিকে তাকিয়ে গরম করে বলল। এই ছেলেটা বেয়াদবি করেছে নাকি বললে বলেন। এখনই তাকে গারদেকা দিয়ে বের করে দিব বাস থেকে। নামিয়ে দিব তখন। আমার দিকে সবাই তাকিয়ে রইল কন্টাক্ট দাড়ি এমন কথা একজন তো চিৎকার করে বলতে লাগলো। অবশ্যই করেছে করলে কি মেয়েটা সেট পরিবর্তন করতে চাই।

এক মহিলা তখন বলতাছে দেখেই তো লম্পট এর মত লাগে। এসব অসভ্য কুলাঙ্গারের জন্য আজকাল মেয়েরা রাস্তা ঘাটে বের হতে পারে না। এমন অবস্থায় এক পর্যায়ে হয়ে গেল। বাসার সবাই ধরে আমাকে মারবে সবাই কে তামিয়ে মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম। আপু সত্যি করে বলেন। তো আপনি আমার বোনের মতো।

আমি কি আপনার সাথে কোনো নোংরামি করেছি। তখন মেয়েটি মাথা নিচু করে বলল না। সকল যাত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললাম। তার সাথে কোনো নোংরামি করিনি আসলে। আমার দোষটা কি জানেন আমি দেখতে কালো দেখতে সুন্দর না।। এজন্যই আমাকে সে ঘৃণা করছে। আর যে মহিলা আমাকে রম্পত বলল। দিকে তাকিয়ে বললাম। আপনি আমাকে দেখে বুঝে ফেললেন আমি লম্পট অশিক্ষিত সত্যি কি জানেন।

কোনদিন খারাপ দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকাইনি। অসভ্যতা করা তো অনেক দূরের কথা। আজকে আমার বেশ ইচ্ছা হচ্ছে আপনার সাথে একটু অসভ্যতা করি। একদিন নিউমার্কেটে গিয়েছিলাম। কেনাকাটার জন্য এক বন্ধু রুমমেট আমাকে ফোন দিয়ে বলল। একটা ফের হ্যান্ডসাম কিনে নিয়ে আস। তারপরে তাকে টাকা দিয়ে দিব এরপর আমি কসমেটিকের দোকানে গেলাম। ফেরেন হ্যান্ডসাম কিনার জন্য যাওয়ার।পর যখন আমি কিরিম চাইলাম।

তখন দোকানদার মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। শুধু টাকা নষ্ট করে তো করছেন। ভাই আপনার গায়ের রং আপনাকে উল পাউডারের মধ্যে ভিজিয়ে লাগলেও। এ রঙের কোন পরিবর্তন আসবে না। কিরিম তো অনেক দূরের কথা। তখন আমার মনে হচ্ছিল মনে হচ্ছিল কোসি একটা থাপ্পড় মারি।

আর আবার কিসের দোষ। আমার গায়ের রং তো কালো এর জন্য দোষ আমার বাবা মায়ের কালো। একটি ছেলে জন্ম দিয়েছে। তারপরে মাকে ফোন দিয়ে বললাম। বাবা মা যদি কোনো পাপ করে প্রভাব নাকি সন্তানের উপরেও পড়ে।

আচ্ছা তোমরা কি কোনো পাপ করেছিলে


যার জন্য আমার গায়ের রং কালো খুসখুসে হয়েছে। মা তখন কাঁদতে কাঁদতে বলল। তুই কি আবার কালো রঙের জন্য মন খারাপ করেছি। কালো হয়েছিস তো কি হয়েছে তুই তো আমার সোনার টুকরা ছেলে। আমি বুঝতে পারলাম মা আমার কথা শুনে কষ্ট পেয়েছে।

তাই কান্না করতাছে মা মাকে হাসানোর জন্য বললাম। দেখছো তুমি আমাকে ভালোবাসো না ভালবাসতে। তাহলে সোনার টুকরো হীরার টুকরা বলতে।

তখন মা হাসতে হাসতে বলল। তুই আমার শুধু হীরার টুকরা না। উইনু হীরা টুকরা ছেলে। সবাই আমাকে কালো বলে দূরে সরিয়ে দেয়। মা বাবা কখনো কালো বলে দূরে সরিয়ে দেয় না।

তাদের দোয়া সব সময় আমার সাথে ছিল একটি ভালো চাকরিও পেয়ে গেলাম। তারপরে আবার শুরু হল অশান্তি বাবা মা বলল। আমায় বিয়ে করতে হবে না পেরে রাজি হতে হলো। হলে একটা স্বত্ব দিলাম কালো মেয়ে ছাড়া অন্য মেয়েকে বিয়ে করব না।

আমি যাকে বিয়ে করবো। দেখতে আমার মত হতে হবে। আর কিছুদিন পর মা একটা মেয়ে ঠিক করলো। এটা দেখতে যেতে হবে যাও দিন সকালে মাকে ভালো করে বললাম।

মা আগেই বুঝে নিও মেয়ে কালো তো নাহলে। আমি কখনোই বিয়ে করব না। মা বলল আগে আমি মেয়ে দেখেছি কুসকুসে কালো আজকে মেকআপ দিয়ে ফর্সা হতেও পারে। এসব তুই চিন্তা করিস না ধুয়ে দিলে মুখ কালো হয়ে যাবে। দেখতে গেলাম কিছুক্ষণ বসে আছি।

তারপরে মেয়ে এলো আমি তো কিছুক্ষণের জন্য হতভম্ব হয়ে গেলাম। সে মেয়ে এত সুন্দর এত সুন্দর মেয়ে। আমি কখনোই দেখিনি।

মা তো পুরোটাই মিথ্যা বলেছিল। মেকআপ করলে বুঝা যায়। এই মেয়ে কোনো মেকআপ করিনি। শুধু একটু কাজল দিয়েছে এই মেয়ের রং ফর্সা। তারপরে মাকে আমি একটু ইশারা দিয়ে বললাম।

তারপরে মাকে বললাম তুমি আমার সাথে মিথ্যা কথা বললে। কেন এ মেয়ে তো কোনো মেকআপ করেনি। এই মেয়ে তো দেখতে পরীর মত সুন্দর এত সুন্দর মেয়ে বিয়ে করব না। মা তখন মন খারাপ করে বলল। তুই কালো হয়েছিস বলে সুন্দর একটি মেয়েকে বিয়ে করতে পারবি না। 

এখন আমি মাকে বললাম


একটা সুন্দর মেয়ের অনেক স্বপ্ন থাকে। একটা সুন্দর হাসবেন্ড হবে। এখন যদি তার সাথে আমার বিয়ে হয় তার স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে। সে আমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে পারবেনা বান্ধবীদের সাথে আমাকে পরিচয় করে দিতে পারবে না। সাথী আমার সাথে চলতে পারবে না।

মা কখনো সুন্দরী মেয়েরা মন থেকে কালো ছেলে কে পছন্দ করে না। সুন্দরী মেয়েরাও কালো ছেলেকে বিয়ে করে এক বাবা-মায়ের চাপে পড়ে টাকা পয়সা বা অর্থ দেখি। তারপরেই মাকে সেখান থেকে বুঝিয়ে সেখান থেকে চলে আসি। পরের দিন অফিসের অফিস করছিলাম হঠাৎ আমার ফোনে ফোন আসে ফোন রিসিভ করতে। একটা মেয়ের কন্ঠ তিনি বলতাছে।

আমি সাদিয়া আপনি যাকে দেখতে গিয়েছিলেন। আমি আপনার অফিসের নিচে আছি। তাড়াতাড়ি আপনি একটু নিচে আসেন। তারপরে কোন উপায় না পেয়ে নিচে নেমে আসি সে আমাকে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর সবাই আমাদেরকে ভূত দেখার মত দেখতে আমি রেস্টুরেন্টে আসতে চাইনি। সে আমাকে জোর করে নিয়ে এসেছে সেই কপি খেতে খেতে বলল দেখুন। প্রথম দেখাতে আমি আমি আপনাকে পছন্দ করিনি।

আপনি কি আপনার মায়ের সাথে গোপনে কথা বলেছেন তা আমি শুনে ফেলেছি সেসব কথা শোনার পর। আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। এক মিনিটের কথাই ভালবেস ফেলেছি তা কখনো বিশ্বাসই করতাম না। আমার সাথে এমনটা না গর্ত আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই। আপনি তো আমাকে দয়া করছেন সে বলল দয়া না।

সামান্য একটাবার সুযোগ দিন মেয়েদের প্রতি এমন ধারণা আমি পাল্টে দিব বিয়ে কিছুদিন পরে অফিস শেষ করে হসপিটালে ওয়েটিং রুমে গিয়ে অপেক্ষা করছি। এ সময় দেখলাম ছাত্রী ও মা হসপিটালে এসেছেন আমি তখন আন্টিকে সালাম দিয়ে বললাম।

আপনি আমাকে চিনেছেন সেই যে আমি আপনার মেয়েকে পড়াতে গিয়েছিলাম দুইদিন পড়ানোর পর আপনি আমাকে চলে আসতে বলেছিলেন।

হ্যাঁ চিনেছি কেমন আছো সে সময় আমার স্ত্রী সাদিয়া এসে বলল। সরি সরি আজকে অনেক রোগী ছিল তাই আজকে দেরি হয়ে গেল। এখন আমি বললাম সাদিয়া বললাম। উনি হল আমার আন্টি উনার মেয়েকে আমি টিউশন করিয়েছিলাম। আন্টিকে বললাম আন্টি এগুলো আমার স্ত্রী সাদিয়া আন্টিকে আমি আগের থেকেই চিনি। উনার মেয়েকে আমি ট্রিটমেন্ট করছি। আমি তখন সাদিয়া কেবল তার কি হয়েছে বলল। টিচারের সাথে তার নাকি সম্পর্ক ছিল তার কারনে সে প্রেগন্যান্ট হয়ে যায় একবার অপারেশন করিয়েছিল। এখন বিয়ে দিয়েছে। এখন আর বাচ্চা হচ্ছে না।

আমার কাছে ট্রিটমেন্ট করছে হ্যাঁ ভালো কথা টিচার। তুমি নাই তো আমি তখন রেগে গিয়ে বললাম আমি কালো বলে। আমাকে দুই দিনের মাথায় বের করে দিল তারপরে হয়তো স্মার্ট ভালো হ্যান্ডসাম টিচার এনেছিল। যখন আমার মন খারাপ দেখে আমার স্ত্রী বলল। নীল শার্টে আজকে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে সুন্দর না চাই।

একদম কাকের মত লাগছে সাদিয়া রাগ করে হাতটা ছেড়ে দিয়েছে। একটু আগে আগে যেতে লাগলো বলতে লাগলো যে ছেলে নিজেকে সম্মান করতে পারে না।

অন্য মানুষ কিভাবে সম্মান করবে তখন তার পিছে পিছে যাচ্ছে আর মনে মনে ভাবছি। কাল কলঙ্কের দাগ হলেও এ কথাটা সুন্দর ভাবে মনে লাগবে। নিজের গায়ের রং নিয়ে কখনো নিজেকে অবহেলা করবেন কোনো মানুষ আপনাকে পাত্তা না। দেয় তাদের থেকে দূরে থাকুন।
Previous chapter Next chapter
1 Comments
  • Niloy Marjan
    Niloy Marjan March 24, 2023 at 11:35 AM

    🥰🥰

Add Comment
comment url